পরিবহণ ধর্মঘট স্পেশালঃ আক্কেলপুর থেকে কাহালু পৌঁছাতে ১৩বার রিকশা-ভ্যান বদল

নোশীন নূফা, নাগরিক সাংবাদিক
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:৩১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭৪২ বার।

জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর হতে বগুড়া - এই রোডে আমি কত বার যাতায়াত করেছি তার কোন হিসাব নেই! রাস্তার অবস্থা খুব একটা সুখকর নাহলেও বাসে করে সোজাপথে যাওয়া-আসা করতে কখনোই খারাপ লাগে না। রাস্তার দু'পাশে অসংখ্য গাছের সারি আর বিস্তৃত ধানক্ষেতের সবুজ শ্যামলিমা- জীবনানন্দের কবিতার চরণের পটভূমিতে সাজানো যেন। গ্রাম-মফস্বল - শহর, সব ধরণের জীবনযাত্রাই চোখে পড়ে ঘন্টা দুয়েকের এই যাত্রাপথে। বাস ও আনুষঙ্গিক ছোট যানবাহনের ভাড়া বাবদ তিনজন মানুষের জন্য খরচ পরে ২০০টাকা। এটা যেকোন স্বাভাবিক দিনের হিসেব।

কিন্তু আজকের দিনটি আর দশটা স্বাভাবিক দিন তো দূরের কথা, আর পাঁচটা হরতাল বা ধর্মঘট-ই বলুন আর শ্রমিক আন্দোলন-ই বলুন, তার চেয়ে যথেষ্ট আলাদা ছিল! অতীতেও অনেক সময় হরতালের মাঝে আক্কেলপুর টু বগুড়া যাতায়াত করতে হয়েছে। সেসব দিনে বাস বন্ধ থাকায় সড়কপথে বিভিন্ন ছোট যানবাহনে পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। খরচ কিছু বেশি পরলেও বিপদের দিন হিসেবে মেনে নেয়া গেছে। কিন্তু আজকের দিনটি সত্যিই আমার জীবনের স্মরণীয় ভ্রমণ হয়ে থাকবে। কেন? জানতে চোখ রাখুন নিচের তালিকায়--

(১) আক্কেলপুর রেলগেট -- আক্কেলপুর কলেজ গেট = ইঞ্জিনচালিত ভ্যান। (ভাড়া - ১৫টাকা)

(২) আক্কেলপুর কলেজ গেট -- তুলসীগঙ্গা ব্রীজ স্ট্যান্ড = ইঞ্জিনচালিত ভ্যান। (ভাড়া - ১৫ টাকা)

(৩) তুলসীগঙ্গা ব্রীজ স্ট্যান্ড -- গোপীনাথপুর বাজার কড়ইতলী স্ট্যান্ড = অটো। (ভাড়া - ৬০ টাকা)

(৪) গোপীনাথপুর বাজার কড়ইতলী স্ট্যান্ড -- বেড়াগ্রাম = ছাদবিহীন অটো। (ভাড়া - ৬০ টাকা)

(৫) বেড়াগ্রাম -- দুপচাঁচিয়া বাজার সংলগ্ন স্থান = ছাদবিহীন অটো। (ভাড়া - ৪৫ টাকা)

দুপচাঁচিয়া বাজার সংলগ্ন স্থান থেকে ১/২ কিলোমিটার হেঁটে দুপচাচিয়া বাজার হাসপাতাল মোড়।

(৬) দুপচাঁচিয়া বাজার হাসপাতাল মোড় -- দুপচাঁচিয়া থানা বাস স্ট্যান্ড = ইঞ্জিনচালিত ভ্যান। (ভাড়া - ১৫ টাকা)

(৭) দুপচাঁচিয়া থানা বাস স্ট্যান্ড -- বারোমাইল, দুপচাঁচিয়া = ইঞ্জিনচালিত ভ্যান। (ভাড়া - ১৫ টাকা)

(৮) বারোমাইল -- হাইওয়ের কোন স্থান = ইঞ্জিনচালিত ভ্যান (ভাড়া - ৩০ টাকা)

 হাইওয়েতে ১/২ কিলোমিটার হাঁটার পর আবার ভ্যান পাওয়া।

(৯) হাইওয়ের কোন স্থান -- বিবিরপুকুর = ইঞ্জিনচালিত ভ্যান (ভাড়া - ৩০ টাকা)

(১০) বিবিরপুকুর -- দরগাহাট = ইঞ্জিনচালিত ভ্যান (ভাড়া - ২০ টাকা)

(১১) দরগাহাট -- সাড়াই, কাহালু রোড = ইঞ্জিনচালিত ভ্যান (ভাড়া - ১৫ টাকা)

(১২) সাড়াই -- ব্রিজ, কাহালু রোড = ইঞ্জিনচালিত ভ্যান (ভাড়া - ১৫ টাকা)

(১৩) ব্রিজ -- কাহালু পৌরসভা [বড়খালার বাড়ি] = ইঞ্জিনচালিত রিক্সা (ভাড়া - ২০ টাকা)

দুপুর ১২:১৫মিনিটে খালার বাসায় পৌছে বিকাল ৫.০০ পর্যন্ত যাত্রা বিরতি।

(১৪) কাহালু -- বগুড়া শহর = খালতো ভাইয়ের মোটর সাইকেলের তেলের সৌজন্যে ১৫০টাকা। (তিনজনকে রেখে আসতে দু'বার করে যাতায়াত করতে হয়েছে বেচারা ভাইয়াকে! মাগরিবের ওয়াক্তে নিজের বাসায় পৌছানো।
আনুষঙ্গিকসহ সর্বমোট ৫৫০টাকার মতো যাতায়াত খরচ।

আক্কেলপুর টু বগুড়া বা বগুড়া টু আক্কেলপুর! এই সোজাসাপ্টা যাত্রাপথে কেউ যদি যাতায়াত করতে যান, তো স্বাভাবিক দিনে কোনই অসুবিধা হবে না আশা করি। তার জন্য কোন গাইডলাইনেরও প্রয়োজন নেই নিঃসন্দেহে! কিন্তু এমন কোন ধর্মঘটের দিন যদি আমাদের মতো মনে করেন, "কত গিয়েছি এমন! কোন না কোন ভাবে ম্যানেজ হয়েই যাবে।" তবে হয়তো আপনি ভুল ভাবছেন না। ম্যানেজ সত্যিই হয়ে যাবে। তবে দুর্ভোগ যে কাকে বলে, কত প্রকার এবং কি কি, তাও বুঝতে পারা যাবে। যখন হাইওয়ের মাঝে এক জায়গায় ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের টিউবের পাম ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলে নেমে পরতে হবে এবং সামনে রোডসাইনে লেখা থাকবে- "বগুড়া_১০ কিলোমিটার"!! আর হ্যাঁ, আশেপাশে খালার বাড়ি এবং খালাতো ভাইয়ের মোটর সাইকেল না থাকলে আপনার যাত্রা আমাদের চেয়েও স্মরণীয় হতে পারে, সে ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই। আর শুধু আক্কেলপুর - বগুড়া না, টিভি আর ফেসবুকে নিউজ দেখে মনে হচ্ছে পুরো দেশের একই অবস্থা বা এরচেয়েও খারাপ হালচিত্র কোন কোন জায়গায়।