দেশে-বিদেশে রমজান 

হাটে উত্তাপ মাঠে আগুন-এবারের রমজান 

মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ
প্রকাশ: ১৯ মে ২০১৯ ১২:৩০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০৬৫ বার।

ধর্মীয় মতে মুসলমানদের পবিত্রতম মাস রমজান। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা ও রাতে নামাজের মাধমে খোদাভীতি ও আত্বসুদ্ধি লাভ করে মুসল্লিরা। রহমত বরকত ও মাগফেরাতের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সার্নিধ্য লাভ হয়। তবে এবারের রমজান একটু ভিন্ন।  ধর্মিয় অনুশাষনের সাথে যুক্ত হয়েছে গ্রীষ্মের দাবদাহ ও সর্বচ্চ সময়ধরে রোজারাখা। সাথে নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দাম। রমজান উপলক্ষে বিশ্বের অন্যন্য দেশে নিত্যপন্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে বাড়ে। তবুও মুসলমানরা বিচলিত নয়। সংযম সাধনা করেই চলছে।
বাংলাদেশে রমজান মানেই মুসলমানদের বাড়তি প্রস্তুতি। রমযানের চাঁদ থেকে শুরু করে ঈদের চাঁদ পর্যন্ত চলে দিনে সিয়াম সাধনা ইফতার এবং রাতে তারাবীহ ও সেহরি। ফেতরা, যাকাত ও দানের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের সহযোগিতার মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন দৃঢ় হয়। দেশে এমন হলে বিদেশে কেমন? মুসলিম বিশ্বের হালচাল জানাযাক।      


পৃথিবীতে বেশি মুসলমান বাস করেন ইন্দোনেশিয়ায়। বর্তমানে দেশটির ২৬ কোটি জনসংখ্যার ৯০ ভাগই মুসলমান। তাদের রমজানের শুরু হয় মূলত চাঁদ দেখার আগে থেকেই। রমজানের ঠিক আগে আগে ইন্দোনেশিয়ার একেকটি অঞ্চলে একেক ধরনের রীতি-নীতি পালন করে। জাভা অঞ্চলে রমজান শুরুর আগে ‘পাডুসান’ নামক এক ঐতিহ্যবাহী উৎসব পালন করা হয়। ‘পাডুসান’ শব্দের অর্থ গোসল করা এ সময় ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষ পাহাড় ঝরনার স্বচ্ছ পানিতে দিনভর গোসল করে নিজেদের শরীর এবং মনকে পবিত্র করে। যারা পাহাড়ি ঝরনার কাছে যেতে পারে না, তারা স্থানীয় নদী বা প্রাকৃতিক জলাধারে নেমে পড়ে। এরপর পরিষ্কার পোশাক ও দেহ নিয়ে শুরু হয় সিয়াম সাধনা। জাভা রাজ্যের মধ্যভাগে অবস্থিত সিমারাং শহরটি বিখ্যাত হয়ে আছে ‘ডুগডিরান নামক আরেকটি ঐতিহ্যের কারণে। আমাদের দেশে রমজানে ১৪/১৫ দিন আগে শবেবরাত পালন করা হয়। ঠিক একই সময় সিমেরাংয়ে মসজিদের পাশ থেকে কামান দাগিয়ে মাহে রমজানের আগমনী বার্তা ঘোষিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে স্থানীয়ভাবে ডের বলা হয়। এ সময় থেকেই মসজিদভিত্তিক বিভিন্ন এলাকায় এক ধরনের ঢোল বা ড্রাম বাজিয়ে রমজানের আগমনী বার্তা দেওয়া হয়। যা স্থানীয়ভাবে ‘ডুগ’ নামে আখ্যায়িত। । এই পবিত্র মাসের আগে মুংগাহান নামের অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজনও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একসঙ্গে খাবারের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে রমজানের তাৎপর্য তুলে ধরে বেশি বেশি এবাদত করার আহ্বান জানান হয়। রমজানের প্রস্তুতিতে দু-একদিন আগে পশু জবাই করা হয় এবং পূর্ব-পুরুষদের কবর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় ও মাসজুড়ে জিয়ারত করা হয়। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে রংবেরঙের মশাল মিছিলের মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানানো হয়।
এশিয়া ও আফ্রিকার সংযোগ স্থাপনকারী দেশ মিসর। এ দেশের প্রায় সাড়ে নয় কোটি মানুষের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশই মুসলমান। পবিত্র রমজানে সমগ্র আরব ও মিসরে ধর্মীয় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। রমজানের পুর্বে মিসরের লণ্ঠন জ্বালানো বা ফানুষ উৎসব করা হয়। মিসরে রমজানের আরেকটি ঐতিহ্য হলো সাহরির সময় ঢোল বাজিয়ে ঘুম থেকে জাগানো। মাসব্যাপী এই সেবা দিয়ে ঈদের আগে পাড়া-মহল্লা থেকে ঈদের বখশিশ সংগ্রহ করে উদযাপন করে খুশির ঈদ। মিসরে রমজানের আরেকটি ঐতিহ্য, কামান দাগিয়ে ইফতারের সময় ঘোষণা করা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো রমজান মাসে প্রায় একই ঐতিহ্য অনুসরণ করা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীনকালে রমজান পূর্ববর্তী শাবান মাসের মধ্যভাগ থেকে আরববাসী রমজানের জন্য খাদ্য-দ্রব্য, ফল ও পানীয় সংগ্রহ শুরু করত। আর গৃহিণীরা তৈরি করত হরেক রকম শুকনো খাবার, যা সহজে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল না। 
রমজানজুড়ে আরব বিশ্বের ঘরে ঘরে ঘরোয়া আড্ডা জমে ওঠে। আর এই আড্ডায় ধর্ম চর্চাও চলে। গল্পের ছলে শোনানো হয় ইসলামের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী। ইরাকের পুরুষরা ইফতারের পর জমায়েত হয় ‘মেহেবিজ’ নামক এক ধরনের খেলার জন্য। আরব বিশ্বের প্রতিটি মসজিদে, রাস্তার পাশে কোনো কোনো এলাকায় নারীদের মাঝেও হুঁক্কা বা সিসার মাধ্যমে ধূমপানের রীতি রয়েছে। খোলা মাঠে ইফতারের ব্যাপক আয়োজন করা হয়। এখানে ইফতার শেষে তারা মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে। তারপর ঘরে ফিরে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন খাবারে অংশ নেয়। ‘কেয়ামুল লাইল’ নামের দীর্ঘ নামাজেও শামিল হন আরবের মুসলমানরা, যা চলে সাহরির পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। কেয়ামতের বর্ণনা, কবরের শাস্তি এবং দোজখের ভয়াবহতার বর্ণিত হয়েছে এমন সূরা পাঠের সময় কেঁদে বুক ভাসান মুসল্লিরা। আবার রাতভর পরিবার-পরিজন নিয়ে পার্কে ঘোরা, সমুদ্রপাড়ে পাটি বিছিয়ে সময় কাটান আর শপিংমলে কেনাকাটা ও আরবদের হলের অভ্যাস। আর রমজান উপলক্ষে আরব বিশ্বে চলে নিত্যপন্যের দাম কমানর প্রতিযোগিতা। 
বাংলাদেশে রয়েছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। বিশেষত চকবাজারে নানা রকম ইফতার সামগ্রী নিয়ে হাজির হন খাবার প্রস্তুতকারীরা। চোখ ধাঁধানো সব ইফতার সামগ্রী। চকবাজ পুরান ঢাকার আরেকটি ঐতিহ্য ‘কাসিদা’ নামের এক ধরনের গজল। যার মাধ্যমে সাহরির সময় সবাইকে ডেকে তোলা হয়। সর্বপরি মুসলিম বিশ্বে রমজান আসে উৎসব ও
খুশির বার্তা নিয়ে।