বগুড়ায় কর্মহীনদের ঘরে ইফতার ও সেহেরি পৌঁছে দিচ্ছে মুক্ততারা
স্টাফ রিপোর্টার
বগুড়ায় বস্তিবাসী, ভিক্ষুক এবং কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে ইফতার এবং সেহেরী পৌঁছে দিচ্ছে ‘মুক্ততারা সোসাইটি’ নামে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ওই স্বেচ্ছাসেবক দলে স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলে সদস্য রয়েছেন কুড়িজন। তারা সংগঠনের একটি শ্লোগানও নির্ধারণ করেছেন সেটি হলো- ‘যেখানেই অন্নহারা, সেখানেই মুক্ততারা’।
সংগঠনের উদ্যোক্তা বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ সংলগ্ন কামারগাড়ি মহল্লার বাসিন্দা একই কলেজের বিবিএ সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিউর রহমান। তিনি জানান, তার দাদা মরহুম হাজী রমজান আলী সব সময় অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেন। তার দেখানো সেই পথ অনুসরণেই ৪ বছর আগে ২০১৭ সালে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে রমজান মাসে এতিম খানায় ইফতার আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারা কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে নিজ নিজ পরিবার আর স্বেচ্ছাসেবীদের হাত খরচের টাকা দিয়ে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচী চালানো হতো। তবে ওই কার্যক্রমের কথা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে এখন তারা ইফতারের পাশাপাশি সেহেরিও বিতরণ করতে পারছেন। বর্তমানে মুক্ততারা সোসাইটিতে স্থায়ী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে রয়েছেন হাসিবুল হাসান বিপু, ফারিয়া তামান্না, সিয়াম শেখ, নূর রাফসি, সাকিব, মোশারফ, মিথুন, নূর আলম ও রেনু বেগম।
নিজেদের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে নাফিউর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জরিপ চালানো হয়। ওই জরিপে কতজন মানুষকে সেহেরি ও ইফতার দিতে হবে তার একটা ধারণা নিয়ে তারপর বাজার করা হয়। এরপর আমরা নিজেরা সেগুলো রান্না করে বিতরণ করি।’ তিনি বলেন, রমজানের বাইরে শীতকালে আমরা দরিদ্রদেও মাঝে গরম কাপড় বিতরণ করি। বৃদ্ধাশ্রম ও এতিম খানার বাসিনন্দাদের প্রিয় খাবার রান্না করে দিই। সম্প্রতি করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া শতাধিক পরিবারে নিয়মিত খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি মাঝে মাঝে ছিন্নমূল শিশুদের হাতে আইসক্রিম, চকলেট ও বিরিয়ানিসহ পছন্দের নানা খাবারও তুলে দেওয়া হয়।
মুক্ততারা সোসাইটির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেরুন্নেছা ইতি জানান, রাত আড়াইটার দিকে শহরের রেলওয়ে স্টেশন এলাকার এক বস্তিতে গিয়ে এক পঞ্চাশোর্ধ নারীকে ডেকে তার হাতে সেহেরীর প্যাকেট তুলে দিতেও দেখেছি তাদের।বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন বস্তির বাসিন্দা জয়নব বেওয়া। তিনি জানান, আগে স্টেশনে তিনি ভিক্ষা করে খাবার যোগার করতেন। কিন্তু করোনায় চলমান লকডাউনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টেশন জনশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে এখন ভিক্ষা দেওয়ারও আর কেউ নাই। চরম এই সংকময় পরিস্থিতিতে মুক্ততারা সোসাইটির খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুশি ষাটোর্ধ্ব জয়নব বেওয়া বলেন, ‘এই ছেলেগুলা যদি বস্তিতে আস্যা (এসে) খাবার না দিত তাহলে খুব কষ্ট হতো।’
সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে সরকারি আজিজুল হক কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শফি মাহমুদ জানান, তরুণদের এমন মহতী উদ্যোগ তকে রীতিমত মুগ্ধ করেছে। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই তাদের এই কাজগুলো আমি দেখে আসছি। এতটাই ভাল লেগেছে যে এক পর্যায়ে আমি নিজেও তাদের সঙ্গে সামিল হয়ে গেছি। তারা আমাকে উপদেষ্টা হিসেবে রেখেছে। আমি মনে করি দেশের সব এলাকায় অভাবী বিশেষত কর্মহীন মানুষদের সহায়তায় স্বচ্ছল প্রতিটি মানুষেরই এগিয়ে আসা উচিত। তাহলে কাউকে অন্তত না খেয়ে থাকতে হবে না।’