বগুড়ার শেরপুরে ফসলি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের অভিযান শুরু

শেরপুর(বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১ ১১:১৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২৮ বার।

বগুড়ার শেরপুরে ফসলি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় অভিযান শুরু করা হয়েছে। মহামারী করোনার মাঝেও ফসলি জমি কেটে মাটি-বালু উত্তোলন করায় তাদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনতে এই অভিযানে নেমেছেন উপজেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২০এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের কাফুরা গ্রামস্থ একটি মাটির পয়েন্টে অভিযান চালানো হয়। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিন এই অভিযানের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় অবৈধভাবে মাটি-বালু উত্তোলন বন্ধের পাশাপাশি দুইটি খননযন্ত্রও জব্দ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থানের কারণে এবার ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন চিহিৃত ওইসব মাটি-বালু উত্তোলনকারীরা। স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ সব মহলকে ম্যানেজ করতে মাঠে রয়েছেন তারা। একইসঙ্গে এই অবৈধ কর্মযজ্ঞ নির্বিঘ্ন করতে দিনের পরিবর্তে রাতকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তাই সন্ধ্যা নেমে এলেই ড্রেজার ও খননযন্ত্রের মাধ্যমে চলছে ফসলি জমির বুক চিরে অবৈধভাবে মাটি-বালু উত্তোলন। এতে করে শতশত বিঘা কৃষি জমি বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে কমতে শুরু করেছে খাদ্য উদ্বৃত্ত এই উপজেলার আবাদি জমির পরিমান। এছাড়া কৃষি জমির সর্বনাশ করে অবৈধভাবে কাটা এসব মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। অতিরিক্ত মাটি পরিবহন আর ওভারলোড ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচলের ফলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। এছাড়া ধুলা-বালিতে পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে উপজেলার খামারকান্দি ও শালফা এলাকায় ফসলি জমি থেকে মাটি-বালু উত্তোলন চলছে। তাই উপজেলার অন্যান্য মাটির পয়েন্টে অভিযান চালানো হলেও এই দুই পয়েন্টে প্রশাসনিক কোনো ঝামেলা নেই। ফলে দিনে-রাতে সমানতালে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন চলছে। এতে করে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, এই উপজেলার দশটি ইউনিয়নে অন্তত চল্লিশ থেকে পঞ্চাশটি জায়গায় খননযন্ত্রের মাধ্যমে ফসলি জমি কেটে মাটি-বালু লুটে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আরও আট থেকে দশটি জায়গায় জলাশয় সংস্কারের নামে মাটি কেটে বিক্রির পাশাপাশি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মহামারী করোনা মোকাবেলায় চলমান লকডাউন কার্যকর করতে উপজেলা প্রশাসন ব্যস্ততা থাকার সুযোগে মাটি-বালু উত্তোলনকারীরা। তাই মহামারী করোনার মাঝেও থেমে নেই অবৈধ এই কর্মযজ্ঞ। উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের পর মাঝে মধ্যে দু-একটি পয়েন্ট বন্ধ থাকলেও অদৃশ্য খুঁটির ইশারায় আবারও ওইসব পয়েন্টে চলছে মাটি-বালু উত্তোলন।

 স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফসলি জমি কেটে মাটি ও বালু লুটের মহোৎসবে মেতেছেন উপজেলার খামারকান্দি, কুসুম্বী, গাড়িদহ, ভবানীপুর ও সীমাবাড়ী বেটখৈর এলাকায় ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। এছাড়া ভবানীপুর ইউনিয়নের বড়াইদহ, ছোনকা ইটভাটার পাশে, কুসুম্বী ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া-উঁচুলবাড়িয়া, ধাওয়াপাড়া, টুনিপাড়া, হাপুনিয়া বটতলা, আলতাদিঘী বোর্ডের হাটসহ আরও অন্তত বিশটি পয়েন্টে ফসলি ও জলাশয় সংস্কারের নামে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার অবৈধ উৎসব চলছে বলে জানান তাঁরা।

খানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙলি দেখিয়ে ফসলি জমি কেটে অবাধে মাটি-বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এসব মাটি পরিবহনের ওভারলোড ট্রাকের কারণে গ্রামীণ পাকা সড়ক নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের জানানোর পর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাটি-বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর দু-একদিন বন্ধ থাকলেও আবারও আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে ওদের। হয়তো বালুদস্যুদের খুঁটির জোর শক্ত। তাই প্রশাসনও নির্বিকার। কোনো বাধাই মানছেন তারা। অবাধে মাটি-বালু উত্তোলন করায় কৃষি জমি ও পাকা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এ অবস্থায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই জনপ্রতিনিধি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিন বলেন, অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই ফসলি জমি কেটে মাটি-বালু উত্তোলন করার খবর পেয়েই একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। জরিমানাসহ বেশকয়েকটি খননযন্ত্রও জব্দ করা হয়েছে। এই অভিযান চলমান রয়েছে। এখানে অবৈধভাবে মাটি-বালু উত্তোলন করার কোনো সুযোগ নেই। তাই খোঁজখবর নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ মাটি-বালু উত্তোলন সব বন্ধ করে দেওয়া হবে দাবি করেন তিনি।